অনুমতি না নিয়ে ও স্বাক্ষর জাল করে রাজধানীর লালবাগ শহীদ আবদুল আলীম খেলার মাঠ সংলগ্ন রাস্তা খনন করছিল ঢাকা ওয়াসা। বিষয়টি নজরে এলে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সেখানে যান। তাদের কাছে খননের অনুমতিপত্রও দেখানো হয়। পরে ডিএসসিসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে জানালে বেরিয়ে আসে ঢাকা ওয়াসার জালিয়াতি। কর্মকর্তা দেখেন যে, তার স্বাক্ষর জাল করে ঢাকা ওয়াসা ভুয়া অনুমতিপত্র বানিয়ে সেখানে রাস্তা খনন করছে।
ততক্ষণে অবস্থা বেগতিক দেখে সেখান থেকে সটকে পড়ে খনন কাজে নিয়োজিত ঢাকা ওয়াসার কর্মী ও তদারকিতে থাকা লোকজন। পরে এই খনন কাজে ব্যবহৃত মালামাল জব্দ করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।
সোমবার (৮ জুলাই) ঢাকা ওয়াসা কর্তৃক এই জালিয়াতি সংগঠিত হয় বলে জানিয়েছেন ডিএসসিসির মুখমাত্র আবু নাছের।
জব্দকৃত মালামালের মধ্যে ২টি জেনারেটর, ১টি ড্রিল মেশিন, ২টি অ্যালুমিনিয়াম বোল, ২টি সাবল, ১টি কোদাল, ১টি এলইডি লাইট ও ৫টি হেলমেট রয়েছে।
জানা গেছে, সায়েদাবাদ পানি শোধনাগারের আওতাধীন লালবাগ খেলার মাঠ (শহীদ আবদুল আলীম খেলার মাঠ) সংলগ্ন পানির মেইন লাইনে ইলেকট্রনিক প্রেসার রিডিউসিং ভালভ (ই-পিআরডি) স্থাপন কাজের জন্য রাস্তা খননের অনুমতি চায় ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষ। করপোরেশনের ওয়ান স্টপ সেল হতে এই খনন কাজের অনুমতি দেওয়া হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে গত ২১ এপ্রিল তারিখে করপোরেশনের অঞ্চল-৩ এর আঞ্চলিক নির্বাহী প্রকৌশলী মিঠুন চন্দ্র শীল স্বাক্ষরিত একটি অনুমতিপত্র ঢাকা ওয়াসার সায়েদাবাদ পানি শোধনাগারের (রক্ষণাবেক্ষণ) নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ মোস্তাকিম হোসেন বরাবর পাঠানো হয়।
অনুমতিপত্রে ২৪ এপ্রিল হতে ৩০ এপ্রিল তারিখের উল্লিখিত রাস্তা খনন করতে হবে বলে জানানো হয়। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট রাস্তা খননের কোনো উদ্যোগ না নিয়ে গত ২৯ এপ্রিল তারিখে ২৩ মে পর্যন্ত খনন কাজের মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য ঢাকা ওয়াসা আবেদন করে যা, ৩০ এপ্রিল তারিখে করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রাপ্ত হয়।
পরে ঈদুল আজহা ও করপোরেশন সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়াদি অবগতপূর্বক তখন রাস্তা খনন করলে জনভোগান্তির কথা জানিয়ে অনুমতি দেওয়া যাবে না বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে মৌখিকভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু এরপরেও অনুমতি ছাড়া রাস্তা খননের জন্য ঢাকা ওয়াসা হতে দুইবার উদ্যোগ নেওয়া হলে অঞ্চল-৩ এর আঞ্চলিক নির্বাহী প্রকৌশলী গত ২০ মে তারিখে সংশ্লিষ্ট রাস্তা খনন করা যাবে না মর্মে পত্র দেয়।
এমতাবস্থায় সোমবার দুপুর আড়াইটা নাগাদ করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে খবর আসে যে, ওয়াসা সেখানে রাস্তা খনন করছে।
প্রসঙ্গত, ঢাকা ওয়াসার সংশ্লিষ্ট দপ্তর হতে ৪.৬০ মিটার দৈর্ঘ্য, ২.৭০ মিটার প্রস্থ অর্থাৎ ১২.৪২ বর্গমিটার সড়ক খননের অনুমতি চাওয়া হয় এবং ২১ এপ্রিল তারিখে খননের অনুমতি দেওয়া পত্রে ওয়াসা চাহিত ১২.৪২ বর্গমিটার সড়ক খননের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আজ ঢাকা ওয়াসা দক্ষিণ সিটির কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল করে এবং অনুমতি না নিয়ে উল্লিখিত সড়কের ২টি স্থানে ১৩.২৯ বর্গমিটার (৪.৪৩*৩ মিটার) ও ২.০৪ বর্গমিটার (১.৭*১.২ মিটার) সড়ক খনন করে। অর্থাৎ অনুমতি চাওয়া হয়েছিল ১টি স্থানে কিন্তু খনন করেছে ২টি স্থানে। এছাড়াও চাহিত অনুমতির বর্গমিটারের সঙ্গে খননকৃত অংশেরও ফারাক রয়েছে।
এ বিষয়ে অঞ্চল-৩ এর আঞ্চলিক নির্বাহী প্রকৌশলী মিঠুন চন্দ্র শীল বলেন, ঢাকা ওয়াসা অনুমতি না নিয়ে লালবাগের শহীদ আবদুল আলীম খেলার মাঠ সংলগ্ন সড়ক খনন করছিল। এ বিষয়ে অবগত হলে আমাদের কর্মকর্তারা সেখানে যায়। এ সময় সেখানে থাকা ঢাকা ওয়াসার লোকজন আমাদের কর্মকর্তাদেরকে আমার স্বাক্ষরিত সড়ক খননের একটি অনুমতিপত্র দেখায়। এ বিষয়ে সন্দেহ হলে তারা অনুমতিপত্রটি আমাকে পাঠায়। সেটি দেখেই আমি নিশ্চিত হই যে, আমার স্বাক্ষর জাল ও তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বিষয়টি জানাজানি হলে তাদের লোকজন সেখান থেকে সরে যায়। এরপর খনন কাজে ব্যবহৃত সেসব মালামাল আমরা জব্দ করি। আর যেহেতু আমার স্বাক্ষর জাল ও তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে সেহেতু এ বিষয়ে আমরা যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব। প্রয়োজনে মামলা করা হবে।