ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার গাজা সিটিতে গত এক সপ্তাহের তীব্র অভিযানের পর সেখান থেকে সেনা প্রত্যাহার করেছে ইসরায়েল। বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) রাতে সেখান সেনাদের সরিয়ে নেওয়া হয়। স্থানীয় বাসিন্দা ও উদ্ধারকারী সংস্থাগুলো শুক্রবার জানিয়েছে, তাদের এই অভিযানে এলাকার সড়ক ও বাড়িঘর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে গাজায় যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির বিষয়ে মধ্যস্থতাকারীদের আলোচনার মধ্যেই এই অভিযান পরিচালনা করলো ইসরায়েল। ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাসের জবাবে প্রায় ১০ মাস ধরে গাজায় অভিযান পরিচালনা করছে ইসরায়েল।
গাজা সিভিল ইমার্জেন্সি সার্ভিস জানিয়েছে, গত সপ্তাহে টেল আল-হাওয়া এবং সাবরা এলাকায় ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে নিহত প্রায় ৬০ জন ফিলিস্তিনির মরদেহ সংগ্রহ করেছে তারা।
বাসিন্দা ও উদ্ধারকারী দলগুলো সতর্ক করে বলেছে, কিছু এলাকা থেকে ট্যাংক সরিয়ে নেওয়া হলেও, কিছু স্থানে ইসরায়েলি স্নাইপার ও ট্যাংকগুলো উঁচু স্থান নিয়ন্ত্রণ করছে। বাসিন্দাদের সেখান থেকে ঘরে ফিরে না যাওয়ার জন্য সতর্ক করা হচ্ছে।
গাজার সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, রাস্তায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে, খণ্ড খণ্ড মরদেহ, পুরো পরিবারগুলোর মরদেহ রয়েছে। এমনকি একটি ঘরের মধ্যে পুড়ে যাওয়া একটি পরিবারের মরদেহও রয়েছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, তারা গাজা সিটিতে হামাসের সক্ষমতা ধ্বংস করার জন্য অভিযান পরিচালনা করছে। আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলে ও বেসামরিক ক্ষতি কমাতে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করছে তারা।
বেসামরিকদের আড়ালে অবস্থানের ইসরায়েলি অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আসছে হামাস।
হামাস ও ইসলামিক জিহাদের সশস্ত্র শাখা দাবি করেছে, তারা ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে ট্যাংক-বিধ্বংসী রকেট ও মর্টার হামলা চালিয়েছে। এতে কয়েক জন ইসরায়েলি সেনা হতাহত হয়েছে। তবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এ সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করেনি।
যুদ্ধের আগে গাজা সিটিতে উপত্যকার মোট জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশেরও বেশি বাস করত। ২০২৩ সালের শেষের দিকে শহরটি বেশিরভাগই ধ্বংস হয়ে যায়। তবে কয়েক লাখ ফিলিস্তিনি ধ্বংসস্তূপের মধ্যে তাদের ঘরে ফিরে আসেন। পরে আবারও ইসরায়েল তাদের সেখান থেকে সরে যেতে বাধ্য করে।
শুক্রবার সকালে সিভিল ইমার্জেন্সি টিম আগুন নেভানোর পর বেশ কিছু বাসিন্দা ক্ষয়ক্ষতি পরীক্ষা করতে ফিরে আসেন। রয়টার্সের ফুটেজে ধ্বংসপ্রাপ্ত সড়ক ও ভবন দেখা গেছে। আল-আহলি হাসপাতালে সাদা কাপড়ে মোড়া নামযুক্ত মৃতদেহগুলো মেঝেতে শায়িত ছিল।
মুসা আল-দাহদুহ মনে করেন, ভারী বিমান ও ট্যাংক হামলা চলাকালীন ইসরায়েলি বাহিনী তার দুই ছেলেকে, তাদের স্ত্রী ও সন্তানদের আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং পরে তাদের ছেড়ে দেয়। তিনি বলেন, আমার মা হুইলচেয়ারে, আমার স্ত্রীও। আমার নাতির পা পক্ষাঘাতগ্রস্ত। তাকে পিঠে করে বহন করতে হয়েছে তার বাবাকে।
হামাস মিডিয়া জানিয়েছে, গাজার দক্ষিণে খান ইউনিসে ব্রিটেন ও তুরস্কভিত্তিক মুসলিম এনজিও আল-খাইর ফাউন্ডেশনের জন্য কাজ করা চার ব্যক্তি একটি ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রে বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন।
উল্লেখ্য, ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাস যোদ্ধাদের হামলায় এই যুদ্ধের সূত্রপাত। ইসরায়েলি পরিসংখ্যান অনুসারে, ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের হামলায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত এবং প্রায় ২৫০ জন বেসামরিক নাগরিক ও সেনাকে অপহরণ করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের প্রতিশোধমূলক আক্রমণে প্রায় ৩৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং উপকূলীয় ঘনবসতিপূর্ণ ছিটমহলটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।